দখিনের খবর ডেস্ক ॥ স্বল্প আয়ের মানুষের সুবিধার্থে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করেছিল। এখন ওই আমদানি করা পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে টিসিবি। প্রায় দেড় বছর আগে টিসিবি যখন পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে তখন দেশের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছিল। কোথাও কোথাও তা ৩০০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। তখন ক্রেতাদের কাছে রীতিমতো ছিল ‘সোনার হরিণ’ টিসিবির ৩৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ। কিন্তু এখন দাম কমে যাওয়ায় টিসিবি আমদানিকৃত পেঁয়াজ না পারছে বিক্রি করতে, আর না পারছে পেঁয়াজ কেনার চুক্তি বাতিল করতে। ফলে পেঁয়াজ এখন টিসিবির গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। টিসিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতাকালে সরবরাহ বাড়াতে টিসিবি তখন নিজে ও বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির চুক্তি করে। ইতিমধ্যে সরকারের বিপণন সংস্থাটি চুক্তিকৃত ১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের বাজারে ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করেছে। কিন্তু এখন দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় তারা আর বাকি ২০ হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছে না। আর পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পারায় সংস্থাটি বাজারে তাদের বিক্রীত অন্য পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়াতে পারছে না। বিশেষ করে বর্তমানে ভোজ্য তেলের অস্থির বাজারে তারা সয়াবিনের সরবরাহ বাড়াতে পারছে না। সূত্র জানায়, বিগত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও মধ্য প্রদেশসহ পেঁয়াজের বড় সরবরাহকারী রাজ্যগুলোতে বন্যা হওয়ায় পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অস্থির হয়ে উঠে দেশের পেঁয়াজের বাজার। তখন লাগানহীনভাবে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। তখন মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়। এমনকি পেঁয়াজের আমদানি বাড়াতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্যও ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় ওই পণ্যটি আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থায়নের সুদ হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়। একই সঙ্গে টিসিবিও স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে রাজধানীসহ সারা দেশে তা বিক্রি শুরু করে। ওই সময় ক্রেতারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা টিসিবির পেঁয়াজ কিনে। কিন্তু দেশে পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হওয়ায় ও সরবরাহ বাড়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম কেজি ২৫ টাকায় নেমে আসে। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। ফলে টিসিবির পেঁয়াজে এখন আর ক্রেতাদের আগ্রহ নেই। এমন অবস্থায় ৩৫ টাকা কেজির ওই পেঁয়াজের দাম কমিয়ে এখন ১৫ টাকা করা হলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। গত এক বছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ৮১ দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে। তবে দেড় বছরের ব্যবধানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৩০০ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত। সূত্র আরো জানায়, পেঁয়াজের বিক্রি বাড়াতে টিসিবি সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডালের সঙ্গে পেঁয়াজের বিক্রি অঘোষিতভাবে বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু তাতেও ক্রেতাদের কাছে থেকে খুব বেশি সাড়া মিলছে না। দিন শেষে অনেক ডিলারের কাছেই অবিক্রীত অবস্থায় পেঁয়াজ থেকে যাচ্ছে। আর আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির চুক্তি একবার করলে তো আর ফেরত নেয়ার সুযোগ নেই। টিসিবি যদি তখন একসঙ্গে এতো বেশি পেঁয়াজ না আনতো তাহলে এবারও পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা হতো। এদিকে এ প্রসঙ্গে টিসিবির ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জুয়েল আহমেদ জানান, বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজ ওঠায় পণ্যটির চাহিদা কমে গেছে। দিন শেষে অনেক সময়ই পেঁয়াজ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। ফলে ডিলাররা অনেকটা বাধ্য হয়েই অবিক্রীত পেঁয়াজ নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করছে। কারণ পেঁয়াজ রেখে দিলে নষ্ট হয়ে যাবে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা রোধে টিসিবি ১ লাখ ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির চুক্তি করেছিল। তার বেশির ভাগ পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে গেছে। তবে চুক্তির ১৮ থেকে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ এখনো আছে। আশা করা যায় আগামী মার্চের মধ্যে ওই পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে যাবে।
Leave a Reply